Subscribe

header ads

লাইফ স্টাইল- অভিজিৎ চৌধুরি



মাঝরাতে এক উন্মত্ত পশুর মতোন আর্তনাদ করছিলাম।আমার পৃষ্ঠদেশ যেন কোন বধ্যভূমি আর সেখানে ঘাতক ছুড়ি দিয়ে ফালাফালা করছে নরম তুলতুলে মাংস।আমার ছেলে উপমান আর বউ দেবলীনা কোন কারণ খুঁজে না পেয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল।ভোর হলে আমি চাওপান করতে পারলাম না।বরং খেলাম বায়োকেমিক্যাল বটিকা।সেবনের পর অফিসের গাড়িতে মহানগরীতে এলাম।এলাম শেঠি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।মারবেলের মেঝে,পরিচ্ছন্ন।এক্স রে হল।

আমি চিকিৎসকের কাছে এলাম।তিনি প্লেট ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে সময় নিচ্ছিলেন।সুযোগ বুঝে আমি বললাম,মাসেল পেইন! দণ্ডপানির মুখ বিকৃত হয়ে গেল,আমি চুপ করে রইলাম।তিনি এবার তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন,কি করেন!

বললাম,ফেরিওয়ালা! 

তিনি বললেন,বাইকিং হয় খুব।

আমি বললাম,একেবারে নয়।আমি সেলসম্যান তবে স্বপ্নের।

তিনি ইংগিত করতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন।

কি স্বপ্ন! 

এই জীবনে অহেতুক ব্যস্ত না হয়ে আয়েশ করা আর আজগুবির দেশে যাওয়া।

উনি এবার স্পষ্ট বললেন,ননসেন্স।সকালে ব্রেকফাস্টে কি খান!

কচুরি চারটে আর অমলেট।

স্বপ্নে না বাস্তবে!

আমি হেসে বললাম,বাস্তবে।

চেজ্ঞ করতে হবে।ফল খেতে হবে।আর চা খেতে হলে চিনি ছাড়া লিকার চা।আর!!

ডাক্তারবাবু বললেন,একটা সারসংক্ষেপ লিখুন – আপনার লাইফ-স্টাইল।আধঘন্টা পর আবার ডাকব।

আমি কাগজ পেন্সিল চেয়ে নিয়ে লিখতে থাকলাম।

যৌবনে আমি রেশন দোকানে যেতাম।গম চালের ব্যাগ হাতের শিরা ফুলিয়ে নিয়ে আসতাম।প্রচুর হাঁটতাম।কলুটোলা থেকে ধর্মতলা।আরো সব আদাড়েবাদাড়ে।স্বপ্নও দেখতাম হাঁটতে হাঁটতেই।

তারপর চাকরি পেলাম।প্রথম প্রথম ট্রেনে চড়তাম এমনকি ভ্যানরিক্সায়ও চড়েছি।

তারপর স্বপ্ন দেখানোর কাজ যেই পেলুম লাইফ স্টাইলে ব্যাপক পরিবর্তন হল।

কি সেই কাজ! গুচ্ছের রিপোর্ট  মানে বস্তা বস্তা স্বপ্ন।রাজুর দোকানে সকালে চা পান বাদ দিলে আমার মাটিতে পা পড়ে না।আমার প্রজেক্টগুলি সব বায়ুমার্গী।স্বপ্ন দেখায়, অবকাশ তৈরি করে কিন্তু সচল হয় না নিজে।

এই অবধি লিখতেই ডাক পড়ল আমার।

ডাক্তারবাবু হেসে বললেন,কিছু বুঝলেন ফেরিওয়ালা সাহেব!

আমি বললাম,লাইফ- স্টাইল বদলাতে হবে।

ঠিক।স্বপ্নগুলি সব পাকস্থলীকে ভারাক্রান্ত করেছে।

আবার বললেন,ওজন কতো!

নব্বই।

বাপ- রে।সত্তর করতে হবে।রোগটার নাম! 

তারপর বললেন,আপনার জেনে কাজ নেই।ওষুধ আর ফিজিওথেরাপি করলে কমবে। তবে পুরোপুরি নয়।

আমি বের হয়ে লাইফ- স্টাইলের দিকে তাকালাম।

মা ভাতের মধ্যে সামান্য তেল আর পেঁয়াজ দিয়ে মেখে দিচ্ছে।কি আঘ্রাণ।

লণ্ঠনের আলোয় উত্তমাশা অন্তরীপ গ্লোবে খুঁজে চলেছি।

সাইরেন বাজল কারখানার।মা ডাকছে,খেতে আয় অপু।

রোগা জীর্ণ চেহেরার একটা ছেলে সাইকেলে করে ওয়ারলেসের মাঠ পার করল।পরিযায়ী পাখিরা ঝিলের ধারে এসে বসল।শরতকাল সবে গেছে।আকাশ তখনও নির্মেঘ। ছেলেটা সেই থেকে স্বপ্ন দেখেছে অবসরের।

পরদিন থেকে আবার কাজে ঢুকলাম।প্রজেক্ট আর প্রজেক্ট।দেখলাম স্বপ্নগুলি বাড়ছে আর খিদেও।কোন কিছু কমছে না।

লাইফ-স্টাইল সেই একই রয়ে গেল।বধ্যভূমিতে যে কোনদিনই আবার যেতে হবে।আর আবার সেই দণ্ডপানি লিখতে দেবে - লাইফ- স্টাইল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ